Tuesday, July 7, 2015

প্রাথমিক শিক্ষক বদলি নীতিমালা সংশোধনী জারি


শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বদলি নীতিমালা-২০১৫’ ঘোষণার সাড়ে তিন মাস পরই আরেকটি সংশোধিত নীতিমালা জারি করেছে সরকার। মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ রেখে গত রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-২ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়।

নতুন নীতিমালায় মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের যেকোনো সময় সংযুক্তি প্রদানপূর্বক বদলি করতে পারবে এমন বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ছাড়া অপর কোনো কর্তৃপক্ষ এরূপ সংযুক্তির আদেশ প্রদান করতে পারবে না। এ ছাড়া সংযুক্তি আদেশ বাতিলের ক্ষমতাও মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত থাকবে।

সংশোধিত নীতিমালায় উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তা (ইউইও) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) বদলিসংক্রান্ত একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ইউইওর একক সিদ্ধান্তে নয়, বরং উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশ নিয়ে বদলি করতে হবে। সুপারিশ কার্যকর করবেন ডিপিইও।

নতুন নির্দেশিকা জারির ফলে এর আগের সব নীতিমালা, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। সদ্য জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদায়নের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। তবে সদ্য জাতীয়করণকৃত এসব বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের নামে আদালত কর্তৃক বদলি স্থগিত থাকবে এমন নির্দেশনা থাকলে তিনি বদলির জন্য বিবেচিত হবেন না। সাধারণভাবে প্রতি শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে শিক্ষক বদলি সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ বছর গত ১২ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বদলি নীতিমালা, ২০১৫’ ঘোষণা করে।

বদলি কর্তৃপক্ষ : জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার নিজ অধিক্ষেত্রে একই উপজেলার মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশক্রমে সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃবদলির অনুমোদন দিতে পারবেন। পরে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার বদলি আদেশ জারি করবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আন্তঃউপজেলা/থানার মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে বদলি করতে পারবেন। সিটি করপোরেশন আওতাধীন থানার ক্ষেত্রেও তিনি এরূপ বদলি করতে পারবেন।

বিভাগীয় উপপরিচালক তার নিজ অধিক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃজেলা বদলি ও প্রধান শিক্ষকদের একই উপজেলা, আন্তঃউপজেলা ও আন্তঃজেলা বদলি করতে পারবেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় উপপরিচালকের সুপারিশক্রমে যেকোনো সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃবিভাগ বদলি করতে পারবেন। একইভাবে তিনি সিটি করপোরেশন এলাকাধীন থানার ক্ষেত্রে সুপারিশক্রমে প্রধান শিক্ষকদের আন্তঃথানা/আন্তঃবিদ্যালয় বদলি করতে পারবেন। সর্বোপরি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জনস্বার্থে যেকোনো শিক্ষককে যেকোনো কারণে বদলি করতে পারবে।

সিনিয়র সহকারী সচিব (বিদ্যা-২) জাজরীন নাহার স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশিকায় আরো বলা হয়, সাধারণভাবে প্রতি শিক্ষা বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে একই উপজেলা/থানা, আন্তঃউপজেলা/থানা/ আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি করপোরেশন ও আন্তঃবিভাগ বদলি করা যাবে। তবে যুক্তিসঙ্গত কারণে এ সময়ের মধ্যে বদলি করা সম্পন্ন না করা গেলে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যেকোনো সময়ের মধ্যে বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে। একইভাবে যেসব বিদ্যালয়ে চারজন বা তার চেয়ে কমসংখ্যক শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন কিংবা শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪০ এর বেশি রয়েছে সে ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনপূর্বক সাধারণ বদলি করা যাবে। উপজেলা/থানার মধ্যে একইপদে একাধিক প্রার্থী থাকলে তাদের মধ্যে চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বদলি করা যাবে না।

কোটা অনুযায়ী উপর্যুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় শূন্য পদ পূরণে নিজ উপজেলা/থানার বাইরে পদায়ন করা শিক্ষকেরা নিজ উপজেলায়/থানার মধ্যে বদলি হতে চাইলে বদলি হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে চাকরির মেয়াদ বা বহিরাগত শিক্ষকের কোটা প্রযোজ্য নয়। একইভাবে যাদের স্থায়ী ঠিকানা জেলা সদরের পৌরসভা, জেলা সদর বা সিটি করপোরেশন হওয়ার পরও পদ শূন্য না থাকায় বাইরে পদায়ন করা হয়েছে তারাও একইভাবে বদলি হতে পারবেন। বদলির পর এক বছর না যাওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক পুনঃবদলির যোগ্য হবেন না। কোনো শিক্ষকের স্ত্রী/স্বামী সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে তাকে স্ত্রী বা স্বামীর কর্মস্থলে বদলির সুযোগ দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে এ সুবিধা কর্মজীবনে সর্বোচ্চ ২ বার নেয়া যাবে।

বদলির সাধারণ শর্তাবলী : সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর পূর্ণ হলে ও পদশূন্য থাকলে আন্তঃউপজেলা/থানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি করপোরেশন ও আন্তঃবিভাগ বদলি করা যাবে। তবে এই দুই বছরের মধ্যে একই উপজেলায়/থানায় পদ শূন্য হলে বদলি হতে কোনো বাধা থাকবে না। এভাবে বদলির এক বছর অতিক্রান্ত না হলে কোনো শিক্ষক পুনঃবদলির জন্য বিবেচিত হবেন না। প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেলে তার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

প্রশাসনিক প্রয়োজনে বদলি : প্রশাসনিক প্রয়োজনে যেকোনো সময় যেকোনো শিক্ষককে বদলি করা যাবে। তবে এরূপ বদলির ক্ষেত্রে নিয়মিত সময়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তা/জেলা শিক্ষা অফিসার/বিভাগীয় উপপরিচালকরা নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বদলি করবেন। তবে অন্য সময়ে অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমেই কেবল বদলি করা যাবে। প্রশাসনিক কারণে বদলি হলে এক বছর অতিক্রান্ত না হলে আবারো বদলি হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত এবং শ্রেণিকক্ষ-ছাত্র অনুপাত ১:৪০ এর বেশি হলে কোনো শিক্ষককে সমন্বয়ের প্রয়োজনে বদলি করা যাবে না। একইভাবে ৫ বা তার কম শিক্ষক বিশিষ্ট বিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষককে বদলি করা যাবে না। সমন্বয় বদলির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বদলি হতে ইচ্ছা পোষণ না করলে কনিষ্ঠদের বদলি করা যাবে। অবসর উত্তর ছুটিতে যাওয়ার এক বছর সময়ের মধ্যে কোনো শিক্ষককে সমন্বয়ের প্রয়োজনে বদলি করা যাবে না। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত চালু রয়েছে এরুপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনে শিক্ষক বদলিপূর্বক সমন্বয় করা যাবে।

নীতিমালায় উল্লেখ আছে, প্রশিক্ষণে যাওয়া, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়াসহ নানা কারণে শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ার কারণে মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বা প্রশাসনিক প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় যেকোনো শিক্ষককে যেকোনো সময় যেকোনো বিদ্যালয়ে সংযুক্তি দিতে পারবে। মন্ত্রণালয় ছাড়া বদলির অপর কোনো কর্তৃপক্ষ এমন সংযুক্তি দিতে পারবে না। নীতিমালা বলা হয়েছে, চাকরি লাভের পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এমন নারী শিক্ষক স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলি হতে চাইলে শূন্য পদের বিপরীতে বদলি করা যাবে। তবে একটি শূন্য পদের বিপরীতে একাধিক আবেদনকারী থাকলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলি করতে হবে। একইভাবে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা শিক্ষিকাকে তার পিতার স্থায়ী ঠিকানায় বদলি করা যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক চাকরিরত অবস্থায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে (ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, এইচআইভি পজিটিভ ভাইরাস) আক্রান্ত হলে কিংবা বাইপাস সার্জারি হলে ওই শিক্ষকের চিকিৎসার সুবিধার্থে অন্যত্র বদলি করা যাবে। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় এরূপ বদলি প্রযোজ্য হবে না। একইভাবে কোনো শিক্ষক দুর্গম এলাকায় (হাওড়, বাঁওর, চর, দ্বীপাঞ্চল) ১০ বছর কর্মরত থাকলে ওই শিক্ষককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শূন্য পদ থাকা সাপেক্ষে একই উপজেলার সুবিধাজনক বিদ্যালয়ে বদলি করা যাবে। পদ শূন্য হওয়ার আগে অগ্রিম বদলির আদেশ দেয়া যাবে না।