Wednesday, October 7, 2015

একটি কল্পনাভিত্তিক ছোটগল্প

>>>>>‪#‎মালিহা‬<<<<<
বগুড়া জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত শিবগঞ্জ উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম কৃষ্টপুরে আমার আবাস। প্রাচীনকালে নাকি এখানে হিন্দুদের পদচারণা ছিল। আজো মাটটি খুড়লে তাদের ননিদর্শন পাওয়া যায়। তারাই নাকি গ্রামের নামটি রেখেছে। ছোটকালে ভাবতাম বড় হয়ে অফিসার হব এবং গ্রামের নাম চেঞ্জ করব। অবশ্য আমার পিতৃপুরুষ জামালপুর জেলায় বাস করতেন, নব্বয়ের দশকে এখানে মাইগ্রেট করেছেন। বাবা ব্যবসাায়ের পাশাপাশি কিছু জমি চাষ করতেন। সেখানে নানা ধরনের ফসল ফলাতেন। গমের আবাদ করলে অঙ্কুরোদগম অবস্থায় পাখির উৎপাত হত, বিশেষ করে বিকেলবেলা। বাবার একমাত্র পুত্র বলে মাঝেমধ্যে আমাকেও ক্ষেত দেখতে যেতে হত। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। কিছু দুধের মাছিকে নিয়ে গমখেতে গেলাম। বিস্কুট শেষ হওয়ার সাথে সাথে খেলার সাথীরা চলে গেল। ক্ষেতের পাশে একটি কবরস্থান ছিল যা গাছগাছড়ায় ভরা। দিনের বেলায়ও অন্ধকার হয়ে থাকত, দেখে ভয়েতে গা ছমছম করত। ছোট ছিলাম বলে ততটা ভয় লাগে নি। ভয়েতে লোকজন এদিকটায় আসতই না। যাহোক আনমনে বসে ছিলাম এবং পাখিদের সাথে খেলছিলাম। দেখলাম অসম্ভব সুন্দরী এক মহিলা আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিল এবং গাল টিপে আদর করতে লাগলো। ঘাবড়ায় নি কারণ ছোটকালে নাদুসনুদুস ছিলাম, গোলগাল চেহারা এবং গাল অনেক সফ্ট ছিল। সেজন্য ছোটকালে আমাকে দেখার পর কেউ কোলে না নিয়ে থাকতে পারতো না। আপু-আন্টিরা সবসময় কোলে কোলে রাখতো এবং গাল টিপে দিয়ে বা চুমু দিয়ে আদর করত। অবশ্য মায়ের চোখে পড়লে তার নিস্তার ছিল না, ভয়ে কাঁচুমাচু করত। কতক্ষণ যে মহিলাটির কোলে ছিলাম বুঝতে পারি নি। মাগরিবের আযান দিচ্ছিল তখন তিনি আমাকে রেখে চলে গেলেন, আমিও বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম। কাউকে কিছু না বলেই পরেরদিন বিকালে আবার মাঠে গিয়ে বসেছিলাম। জানি না একটা অদৃশ্য মোহ কাজ করছিল। উনি আসলেন এবং আমাকে কোলে নিয়ে আদর করলেন। ইশারা করে দেখালেন বিলের ওপাশটায় তার বাড়ি, যেতে চায় কিনা জিজ্ঞেস করলেন। মাথা নেড়ে সায় জানালাম। বিলটাতে আমরা কত শাপলার ফুল যে ছিড়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু আগে এ কুঁড়েঘর দেখেছিলাম কিনা ঠাহর করতে পারলাম না। বাড়িতে গিয়ে দেখলাম একটা চাঁদের মত ফুটফুটে মেয়ে খেলছে। তার নাম মালিহা। তার সাথে আমিও খেলায় মেতে উঠলাম। সে বউ সেঁজে আমাকে বাজার নিয়ে আসতে বলো। আমি কিছু গাছের পাতা (গাছে চড়তে পারি না, কিন্তু পাতা কিভাবে পারলাম সে খেয়াল ছিল না) নিয়ে আসলাম। সে মাটি দিয়ে ভাত রান্না করল। আমরা খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ক্ষিদেয় পেট চো চো করছে। রাতের কথা মনে পড়লো। আন্টিকে বলতেই কিছু টাটকা ফল দিলেন খেতে। সারাদিন মালিহার সাথে খেললাম এবং অনেক মজা করলাম। সে আসতে দিতে না চাইলেও বিকালে আন্টি আমাকে ক্ষেতের পাশে রেখে গেলেন। দাদু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে আমাকে বাড়ি নিয়ে গেলেন, কিছুই বুঝতে পারলাম না। শত শত পুরুষ-মহিলা দিয়ে বাড়ি বোঝাই, সবার চোখে পানি। মা এসে পিঠে দুই ঘা বসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কাল সারা দিনরাত কোথায় ছিলি। আমি মালিহা, আন্টি ও বিলের উপর থাকা কুড়েঘরের কথা বললাম। বাবা বললেন ওখানে তো কোন ঘরই নাই। ব্যস, কাররো বুঁঝতে বাকি রইলো না যে আমাকে পরী নিয়ে গিয়েছিল। মুরুব্বীরা নানা কথা বললেন, তাকে নিয়ে শহরে যাও, এটা কর, ওটা কর। বাবা হুজুর ডেকে ফু দিয়ে নিলেন, আমাকে আয়তুল কুরসী শেখালেন। সবসময় চোখে চোখে রাখতেন, একলা বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মোহ আমাকে তাড়া করল, সকলের চোখ ফাকি দিয়ে আবার সেখানে অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু কেউ আসলো না। আজো গ্রামে গিয়ে সেখানে গিয়ে বসে থাকি, মালিহা আসে কিনা। আমার কুড়ি বছর বয়সে মালিহার মত সুন্দরী কোন মেয়ে আমার চোখে পড়ে নি। অনেককেই ভাল লাগে, কারো রূপে, কারো নির্মলতায়, কারো কন্ঠস্বর, কারো মুক্তঝরা হাসি, কারো অমায়িকতা, কারো মেধায় । কিন্তু #মালিহা সবকিছুতে পূর্ণ ছিল। বাজি ধরে বলতে পারি চন্মচোখে মালিহাকে দেখে কেউ ভুলতে পারত না। জানেন, ফেসবুকে যেদিন প্রথম একাউন্ট খুললাম ‪#‎মালিহা_পরী‬ লিখে সার্চ দিলাম এবং ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইলাম। কন্টাক করে দেখি কেউ পরী নয়। শুধু‪#‎Maliha‬ লিখে সার্চ দিলাম এবং শত শত মালিহাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ড করলাম। কেউ এক্সেপ্ট করল, কেউবা করল না; কেউ স্বদেশী, কেউ বিদেশি; কেউ ইংরেজি বুঝে, কেউ বুঝে না ; দুয়েকজন মালিহা নামের ছেলেদেরও দেখলাম কিন্তু আমার পরীকে পাইলাম না। সৌদি, মালয়েশিয়া, ইরানী নানা দেশের মালিহা আজ আমার ভাল বন্ধু। মালিহা তুমি যেখানে আছ ভাল থেক, শুধু জেনে রেখ এই পাগল তোমার অপেক্ষায়..........

Created By Abdullah Al Mamun