Monday, June 15, 2015

দু’কেজি চালে বৃদ্ধার মাস চলে!


উনি আগে কারখানায় কাজ করতেন৷‌ দিনভর বিস্কুটের প্যাকেট করতেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে৷‌পরে বন্ধ হয়ে যায় সেই কারখানা৷ তারপর থেকেই কাজ হারিয়ে ঘরবন্দি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি-লাগোয়া ফুলবাড়ির বিস্কুট কারাখানার শ্রমিক মিনতি বর্মন৷‌ অন্য শ্রমিকেরা এদিক-সেদিক কিছু কাজ জুটিয়ে নিলেও পারেননি মিনতি৷‌ এক মেয়ে স্বামীর সংসারে৷‌ ১০ বছর আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর মারা যান স্বামী পবিত্র বর্মন৷‌

এরপর অসহায় হয়ে পড়েন৷‌ ভাড়াবাড়ির খরচ জোগাতে পারছিলেন না৷‌ শিলিগুড়ির ঠাঁই হয় পশ্চিম ধনতলা মহানন্দা নদীবাঁধের পাশের এক টুকরো জায়গায়৷‌ কারখানা বন্ধের সময় যে ক’টা টাকা পেয়েছিলেন তা দিয়ে কিছু দিন সংসার টেনেছেন৷‌ এখন আর সেই টাকাও নেই৷‌ কাজ করতে পারেন না৷‌ সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারেন না৷‌ তার বয়স ৬০ বছর চলছে৷‌ বেঁচে আছেন অনাহার সঙ্গী করেই৷‌ দু’কেজি চাল কেনেন৷‌ সেই চাল এক মুঠো নিয়ে হাঁড়িতে চাপান৷‌ সারা মাস ওই দু’কেজি চাল দিয়ে চলে৷‌

কিনতে পারেন না সবজি৷‌ জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে এনে তেল ছাড়াই নুন-জল দিয়ে উনুনে চাপান৷‌ না খেতে খেতে শরীর শীর্ণকায়৷‌ উচ্চতা কমে কমে চার ফুট৷‌ গলার আওয়াজ বের হয় না৷‌ শক্তি নেই৷‌ তবুও ওই আধপেট খাবার খেয়ে দৌড়ন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা প্রধানের কাছে৷‌ বিধবাভাতা বা বার্ধক্যভাতা যদি মেলে৷‌ তা হলে দু’কেজি আরও বেশি চাল কিনতে পারবেন৷‌ দু’বেলা দু’মুঠো বেশি ভাত খেয়ে আরও ক’টা দিন বাঁচার ইচ্ছে৷‌ কেউ শোনেননি৷‌ অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াননি রাজনৈতিক নেতারাও৷‌ ‘একটি মাত্র ভোট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন না নেতারা!’

অভিযোগ এক প্রতিবেশীর৷‌ আশেপাশের বাসিন্দারাই মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যান৷‌ কেউ দেন পরার শাড়ি৷‌ যেখানে অপুষ্টি নিয়ে সরকারের এত নজরদারি, সেখানে পঞ্চায়েত প্রধানেরাও কোনও খোঁজ নেন না এই বৃদ্ধার৷‌ অসহায়তার কথা জানেন সমাজকর্মী মদন ভট্টাচার্য৷‌ তিনি বিষয়টি নজরে আনার চেষ্টা করেন, যাতে ওই বৃদ্ধা পেটপুরে খেয়ে বাঁচতে পারেন, তাই মাসের খোরাক নিয়ে পৌঁছে যান ওই বাড়িতে৷‌ চাল, ডাল থেকে মুখে মাখার প্রসাধনী দিয়ে আসেন৷‌ প্রতি মাসে এভাবে চাল-ডাল দিয়ে যাবেন বলে জানান মদনবাবু৷‌ খবর গিয়েছে রাজগঞ্জের বি ডি ও নরবু শেরপার কাছে৷‌ তিনি খোঁজখবর শুরু করেছেন৷‌ বৃদ্ধাকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি৷‌